আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে এমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যার মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দলকে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া যাবে। এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলের নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, একমাত্র বিএনপিই আইনি প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের বিচার দাবি করে এসেছে। যদিও কিছুটা দেরিতে হলেও সরকার সেই পথেই এগোচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
শনিবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে বিএনপি স্থির করে যে, আওয়ামী লীগকে আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগে দলটির সম্মতি থাকবে। আজ এ বিষয়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অবস্থান জানাতে পারে বলেও জানা গেছে।
বৈঠক সূত্রে দলের এক সিনিয়র নেতা বলেন, “বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে—তা মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু এই বিচার প্রক্রিয়া কতদিন চলবে, তা সরকার বলছে না। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্ররা যদি দাবি তোলে—বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন বন্ধ থাকবে, তাহলে কি সরকার তাও মানবে? যদি বিএনপি তখন নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে? নির্বাচন নিয়ে সরকার যদি এখনই স্পষ্ট অবস্থান না নেয়, তাহলে অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে।”
এর আগেও, গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি লিখিতভাবে দাবি জানিয়েছিল যে, আওয়ামী লীগকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচার করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
এই বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শুক্রবার বলেন, “সরকার চাইলে আইন-আদালতের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারে।”
গত কয়েকদিন ধরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। যদিও বিএনপি সরাসরি এই আন্দোলনে অংশ নেয়নি, তবে বিষয়টি কেন্দ্র করে রাজনীতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে শনিবার রাতে জরুরি ভিত্তিতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক আহ্বান করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যা রাত সাড়ে ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে।
এদিকে, বিএনপির বৈঠক চলাকালেই অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আওতায় আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে আইন সংশোধনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালকে রাজনৈতিক দল, তাদের অঙ্গসংগঠন ও সমর্থকদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়।
শনিবার ছুটির দিনেও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাটি রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত চলে। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভা শেষে আইন বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সংবাদ ব্রিফিংয়ে সিদ্ধান্তগুলো জানান।
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, সংশোধিত আইনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলকে শাস্তি দেওয়ার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা ইতিবাচক। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার উদ্যোগে বিএনপির সম্মতি থাকবে।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, বিএনপির নেতারা মনে করছেন, নাগরিক পার্টির আন্দোলন এবং সরকারের সিদ্ধান্ত অনেকটা ‘ফ্রেন্ডলি ম্যাচ’-এর মতো। কারণ নাগরিক পার্টিকে তারা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা একটি দল হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়নি।