বিভেদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করলো টাওয়ার হ্যামলেটস। শনিবার দুপুরে হোয়াইটচ্যাপেল টাউন হলের সামনে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসমাবেশে সমবেত হয় বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের হাজারো মানুষ। রূপ নেয় এক বিশাল জনসমুদ্রের। পূর্ব ঘোষিত এ শান্তি র্যালিতে অংশ নেন রাজনীতিক ও ধর্মীয় নেতা এবং বিভিন্ন কমিউনিটির প্রতিনিধিরা।
উপস্থিত সকলেই একবাক্যে বলেন, বর্ণবাদ ও বিভেদের কোনো স্থান নেই টাওয়ার হ্যামলেটসে। নেই কোনো বিভাজনের সুযোগ। ডানপন্থীদের উগ্র কর্মসূচি ও মিছিল আমরা ঐক্যবদ্ধ শান্তিপূর্ণভাবে ঠেকিয়েছি এবং ভবিষ্যতে ও আমাদের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এই বিজয় কোনো সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর নয়, এটি শান্তিকামী মানুষের বিজয়। তারা বলেন, ফার রাইট বা বর্ণবাদী মতবাদকে কখনোই টাওয়ার হ্যামলেটস প্রশ্রয় দেয়া হবে না। বিশাল এ সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান, ইয়োর পার্টির প্রধান জেরেমি করবিন এমপি, ইউনাইটেড ইস্টএন্ড এর চেয়ার ড. গ্লিন রবিন সহ আরো অনেকে।
স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম এর কো চেয়ার সাবি দেলু ও ইউনাইটেড ইস্টএন্ড এর ফাউন্ডিং মেম্বার ড. আবদুল্লাহ ফালিক এর পরিচালনায় বক্তারা বলেন, এই বিজয় শান্তিকামী মানুষের। কোনো সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর নয়। কোনো ফার রাইট বা বর্ণবাদী মতবাদকে প্রশ্রয় দেবেনা টাওয়ার হ্যামলেটস। ব্যাটল অব ক্যাবল স্ট্রিট থেকে আজ পর্যন্ত উগ্রবাদীরা কখনো টাওয়ার হ্যামলেটসকে ভাঙতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। সমাবেশে নির্বাহী মেয়র লুৎফর বলেন, “এই সমাবেশ আমাদের বৈচিত্র্য উদযাপনের এবং কমিউনিটিকে একত্রিত রাখার একটি উদাহরণ। আমরা অতীতের মতো এবারও প্রমাণ করেছি যে বিভেদের শক্তি কখনোই ইস্টএন্ডে জয়ী হতে পারেনি, এবং ভবিষ্যতেও পারবে না।” মেয়র শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পেছনে ভূমিকা পালনকারী সকল সংগঠন, পুলিশ এবং কাউন্সিলের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের ধন্যবাদ ও অকৃতজ্ঞতা জানান।
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও এমপি জেরেমি করবিন, মেয়র লুৎফর রহমান সহ সকল সংগ্রামী মানুষদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আমরা সবসময় টাওয়ার হ্যামলেটসের পাশে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। এখানে টমি রবিনসনের মতো বর্ণবাদীদের কোনো স্থান এখানে নেই। তিনি আরো বলেন, আমার মা ১৯৩৬ সালে ব্যাটল অব ক্যাবল স্ট্রিট জুইস কমিউনিটিকে সমর্থন জানাতে এখানে এসেছিলেন, আজ আমি এসেছি আপনাদের পাশে দাঁড়াতে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, জুইস স্যোসালিস্ট ফোরামের চেয়ার ডেভিড রোজনবাগ, ইস্ট লন্ডন মসজিদের সিইও জুনেদ আহমেদ, স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম এর ওয়েম্যান বেনেট, ক্রাইস্ট অ্যাপোস্টলিক চার্চ এর রেভারেন্ড ফাদার জেমস ওলানিপেকুন, মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন এমসিএ এর প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার হামিদ হোসেন আজাদ, লোকাল চার্চ নেত্রী মাদার বেনেডিক্ট, সোমালি অ্যাক্টিভিস্ট সাফা জামা এমবিই, ইউনাইটেড ইস্টএন্ড এর এক্টিভিস্ট সামিরা আলি, এবং টাওয়ার হ্যামলেটস্ ইন্টারফেইথ ফোরামের প্রতিনিধি সুফিয়া আলম সহ আরো অনেকে।
বক্তারা বলেন, “বর্ণবাদ, সহিংসতা এবং বিভেদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্য প্রদর্শনের জন্য আজ আমরা এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে একত্রিত হয়েছি। ঐক্যই আমাদের শক্তি।”
তারা বলেন, শনিবার টাওয়ার হ্যামলেটসে ইউকিপ এর বিক্ষোভ কর্মসূচি কমিউনিটিতে গুরুতর অস্থিরতা তৈরীর আশঙ্কা থাকায় মেট পুলিশ এখানে তাদের এ সমাবেশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপরও ঐক্য, সম্প্রীতি ও বৈচিত্র্যের প্রতীক হিসেবে শনিবার হোয়াইটচ্যাপেলে এই শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কিন্তু আমরা জানি, ব্যাটল অব ক্যাবল স্ট্রিট থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত, ফার রাইট অর্থাৎ উগ্রপন্থীরা কখনো টাওয়ার হ্যামলেটসকে বিভক্ত করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না।”
চলতি মাসের শুরুতে টাওয়ার হ্যামলেটস ফুল কাউন্সিল মিটিংয়ে ডানপন্থী উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রস্তাব পাশ হয়, যেখানে তারা অঙ্গীকার করেন যে, বরার বাইরে থেকে আসা ফার রাইট কর্মীদের উপস্থিতি প্রত্যাখ্যান করা হবে, যাতে বহিরাগতরা স্থানীয় কমিউনিটিকে টার্গেট করতে না পারে। একই সাথে মেট পুলিশ তাদের এক বিবৃতিতে জানানো হয় যে, জননিরাপত্তার স্বার্থে এবং বিশৃঙ্খলা রোধে ইউকিপ ইভেন্টটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে

