Tuesday, June 3, 2025
Homeবাণিজ্যব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা হ্রাস পেয়ে বিদেশি ঋণে নির্ভরতা বেড়েছে

ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা হ্রাস পেয়ে বিদেশি ঋণে নির্ভরতা বেড়েছে

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটাপন্ন এবং সরকারের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যাংক খাত বর্তমানে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বড় ধরনের তারল্য সংকটে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, ব্যাংকগুলো ঋণের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে, যা সরকারের জন্য বাজেটের ঘাটতি পূরণে চাপ তৈরি করেছে। সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করেছে।

সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়েছে। একই সঙ্গে, বৈদেশিক ঋণ ১৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির হার ৬.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার চেষ্টা করছে সংকটের মোকাবিলা করতে, তবে বাজেটের আকার ৫৩ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে, ফলে সংশোধিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

অর্থনীতির সংকট কাটানোর জন্য সরকার অপচয় রোধে মনোযোগ দিয়েছে। সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কিছু অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল করেছে এবং এতে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। এছাড়া, মেট্রোরেলের সংস্করণের জন্য বিগত সরকারের নির্ধারিত ৩০০ কোটি টাকার পরিবর্তে ১০ কোটি টাকায় কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এই ধরনের পদক্ষেপগুলো বাজেটের ব্যয় কমাতে সহায়ক হচ্ছে।

অন্যদিকে, দেশের রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের পতন হয়েছে। ভ্যাট, শুল্ক এবং আয়কর আদায় বিগত দুই অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে, যা সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা আরও বাড়িয়েছে। এনবিআর জানিয়েছে যে, তাদের ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণে অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণের চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে, কারণ সরকার মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মনোযোগ দিয়েছে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে, কারণ মূল্যস্ফীতির হার ইতিমধ্যেই তার চেয়ে বেশি রয়েছে।

বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ইমেজের কারণে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো আগের তুলনায় ঋণের প্রতিশ্রুতি বেশি দিচ্ছে। এর ফলে, অভ্যন্তরীণ ঋণ সংকট কিছুটা কমাতে সহায়তা হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

সার্বিকভাবে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন এক গুরুতর সংকটের মধ্যে রয়েছে, এবং সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সংকটের মোকাবিলায় সহায়ক হলেও এর সমাধান সময়সাপেক্ষ হতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় পোষ্ট