জাপানের উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। তা সত্ত্বেও পদত্যাগের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। রোববারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোটের হারের পর তিনি বলেন, তিনি গম্ভীরভাবে ফলাফল গ্রহণ করছেন। তবে তার মূল মনোযোগ এখনো আমেরিকার সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনার দিকে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এবং এর ছোট জোটসঙ্গী কোমেইতো জোট উচ্চকক্ষে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় ৫০টি আসন পেতে ব্যর্থ হয়। দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম এনএইচকে জানায়, মাত্র একটি আসনের ফলাফল বাকি থাকলেও, জোটের আসনসংখ্যা ৪৭-এ থেমে গেছে। এর আগে গত বছর জাপানের আরও ক্ষমতাধর নিম্নকক্ষেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় এলডিপি-কোমেইতো জোট। রোববারের নির্বাচনে উচ্চকক্ষের অর্ধেক, অর্থাৎ ১২৪টি আসনের জন্য ভোটগ্রহণ হয়। এর মেয়াদ ছয় বছর।
কান্দা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক জেফ্রি হল বিবিসিকে বলেন, ডানপন্থি আর কট্টরপন্থি দলগুলোর উত্থান এলডিপির রক্ষণশীল ভোটব্যাংককে খেয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইশিবাকে অনেকেই আগের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মতো যথেষ্ট জাতীয়তাবাদী মনে করেন না। তার মধ্যে আবের মতো চীনের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব নেই। ইতিহাস নিয়ে কট্টর কোনো অবস্থানও নেই।
উল্লেখ্য, শিনজো আবে জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ২০০৬-০৭ এবং পরে ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দুই দফায় ক্ষমতায় ছিলেন। জেফ্রি হল বলেন, এলডিপির একটি বড় অংশের ভোট চলে গেছে ‘সানসেইতো’ পার্টির দিকে। এই দল এখন এমন সব কথা বলছে যা এর আগে উচ্চকক্ষের কোনো সদস্যের মুখে শোনা যায়নি- যেমন ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য, বিদেশি বিরোধী মনোভাব এবং ইতিহাস নিয়ে চরমপন্থি অবস্থান।
প্রধানমন্ত্রী ইশিবার মধ্য-ডানপন্থী এলডিপি ১৯৫৫ সাল থেকে প্রায় টানা ক্ষমতায় থাকলেও দলীয় নেতৃত্বে বারবার পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান ফলাফল ইশিবার প্রতি জনতার হতাশারই বহিঃপ্রকাশ। বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য দ্বন্দ্বে তার ব্যর্থতা জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছে। চালসহ খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির কারণে এলডিপির প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে। আগের তিনজন এলডিপি প্রধানমন্ত্রী যারা উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছিলেন, তারা নির্বাচনের দুই মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করেন। ফলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেছিলেন, এবারও একই পরিণতি হতে পারে।
এই পরাজয়ের পর এলডিপির মধ্যে নেতৃত্ব বদলের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সম্ভাব্য বিকল্পদের মধ্যে আছেন গত বছরের নেতৃত্ব নির্বাচনে ইশিবার পরেই দ্বিতীয় হওয়া সানায়ে তাকাইচি, সাবেক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী তাকায়ুকি কোবায়াশি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমির ছেলে শিনজিরো কোইজুমি। তবে দলীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন ঘটলে সেটা নতুন রাজনৈতিক নাটক তৈরি করবে এবং মার্কিন-জাপান বাণিজ্য আলোচনার এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সরকারকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।