Thursday, June 5, 2025
Homeঅপরাধসিলেটের পাহাড়-টিলা রক্ষায় প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিবাদে মানববন্ধন

সিলেটের পাহাড়-টিলা রক্ষায় প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিবাদে মানববন্ধন

সিলেট বিভাগজুড়ে চলছে পাহাড়-টিলা কেটে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের হিড়িক। কখনো রাতের আঁধারে, কখনো দিনে প্রকাশ্যে
পাহাড়-টিলার চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করছে সংঘবদ্ধ ভূমিখেকোরা। কোথাও হাউজিং-এর নামে, কোথাও রিসোর্ট নির্মাণে
প্রভাবশালীরা জড়িয়ে পড়ছেন। যা নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ স্থানীয় প্রশাসন। এভাবে পাহাড়-টিলা কাটা চলতে থাকলে সিলেট
বিভাগের ভূ-প্রকৃতি সম্পূর্ণভাবে বদলে যাবে। বন্ধ হয়ে যাবে প্রাকৃতিক ছড়ার প্রবাহ। শুষ্ক মৌসুমে দেখা দেবে পানির ভয়াবহ
সংকট। বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উপলক্ষে সিলেটের পাহাড়-টিলা রক্ষায় প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিবাদে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী
রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেট শাখা আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সম্মুখে ধরা সিলেট শাখার আহ্বায়ক ডা. মোস্তফা
শাহজামান চৌধুরী বাহারের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিতে মূল বক্তব্য দেন সিলেটের পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক ও
ধরা’র সদস্য সচিব আব্দুল করিম কিম। কর্মসূচিতে ধরার পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সিলেট বিভাগের মধ্যে
বর্তমানে পাহাড়-টিলা ধ্বংসে সবচেয়ে এগিয়ে আছে সিলেট জেলা। জৈন্তাপুরের পঞ্চাশের পাহাড়মালা, গোয়াইনঘাট,
কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাটে পাহাড়-টিলা কর্তন হচ্ছে পাথর উত্তোলনে। যা এখন খনিজ সম্পদ আহরণ নামে অভিহিত হচ্ছে।
হাজার কোটি কোটি টাকার পাথর আহরণের কারণে এই পাহাড়-টিলার বিনাশ থামছে না।
এদিকে, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় স্রেফ জলাভূমি ভরাট ও মাটি বিক্রির জন্য টিলা কাটে একদল
লোক। এরা টিলা বিনাশের জন্য টিলার মালিকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়।
সিলেট সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশনভুক্ত ওয়ার্ডসমুহে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে
বিভিন্নস্থানে টিলা কাটা চলছে। সিলেট মহানগরীর আশপাশ এলাকার টিলাখেকোরা অতীতেও টিলা ধ্বংসে বিগত সরকারের
সময়ের রাজনৈতিক পাণ্ডাদের আশ্রয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল। সরকার পরিবর্তনেও এদের প্রভাব ও স্বভাবের পরিবর্তন
হয়নি। এই সিন্ডিকেট টিলা নিশ্চিহ্ন করার কাজ সহজ করে দেয়। এদের পরিবেশ বিধ্বংসী সূক্ষ্ম বুদ্ধির কাছে পরিবেশ
অধিদপ্তর নামের সরকারী প্রতিষ্ঠান আসলে ঢাল-তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দার। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ
গ্রহণ করতে পারত। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি সিলেটের পাহাড়-টিলা রক্ষায় জেলা প্রশাসনের ভূমিকা
সাক্ষীগোপালের মতো। জেলা প্রশাসনকে সিলেটের পাহাড়-টিলা ধ্বংসের দায় নিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ধরা সিলেট শাখার আহ্বায়ক ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি সিলেটের
বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয় পাহাড়-টিলা কাটা রোধে শুধু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না।
উপজেলা পর্যায়ে অনেক সৎ ও সাহসী তরুণ কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁদেরকে পাহাড়-টিলা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের

নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা দিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপ জোরালো করতে সিলেটের পাহাড়-টিলা রক্ষায়
সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিতে হবে।
সাংস্কৃতিক সংগঠক শামসুল বাছিত শেরো বলেন, সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার একাধিক
উপজেলায় পাহাড়-টিলা বিনাশের তথ্য সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। আবার বিভিন্নস্থানে অভিযানও হচ্ছে। কিন্তু
এসব অভিযান শেষে যে দায়সারা মামলা হয়, তাতে পাহাড়-টিলা নিশ্চিহ্ন করার ধ্বংসলীলা থামে না।
সিলেটের পাহাড়-টিলা রক্ষায় প্রশাসনের ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) জেলার কমরেড
উজ্জ্বল রায় বলেন, ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও
বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সিলেটের পাহাড়–টিলা কাটা রোধে জেলার
পাহাড়–টিলা এলাকায় সার্বক্ষণিক তদারকির নির্দেশ দিয়েছিলেন। সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশনের মেয়র,
পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগের উপপরিচালকসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে নির্দেশনা
বাস্তবায়ন বিষয়ে ছয় মাস পরপর উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়েছিল। হাকিম নড়লেও হুকুম নড়ে না। কিন্তু
মহামান্য হাইকোর্টের এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। যা আদালতকে অবজ্ঞা করা বলেই প্রতীয়মান হয়।
পরিবেশকর্মী রেজাউল কিবরিয়ার সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন পাত্র সমাজ কল্যাণ
পরিষদ (পাসকপ) এর প্রধান নির্বাহী আদিবাসী নেতা গৌরাঙ্গ পাত্র, সাবেক ছাত্রনেতা ও ধরার অন্যতম সংগঠক মাহমুদুর
রহমান চৌধুরী (ওয়েস), ভূমিসন্তান বাংলাদেশ-এর আশরাফুল কবির, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের সিলেট বিভাগীয়
সমন্বয়কারী সাদিকুর রহমান সাকী, আইনজীবী অরূপ শ্যাম বাপ্পী, চৈতন্য প্রকাশনী সিলেট-এর প্রকাশক রাজিব চৌধুরী,
পরিবেশকর্মী রোমেনা বেগম রোজী ও সোহাগ তাজুল আমিন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সিলেট এর সাধারণ সম্পাদক
আয়শা আখতার, ওয়ান আর্থ ইনেশিয়াটিভ শাহরিয়ার রহমান সাকিব, রাতারগুল গ্রামের অধিকারকর্মী মিনহাজ আহমেদ
প্রমুখ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় পোষ্ট