সাবেক টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের ফাঁসির আদেশ সুপ্রিম কোর্টেও বহাল রেখেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আদালত রায়ে জানিয়েছেন, রায় ঘোষণার তারিখ থেকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রদীপের ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ড-সংক্রান্ত বহুল আলোচিত এই মামলার রায়ে বিচারপ্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে। ঘটনার পরপরই ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠে এবং প্রশ্ন উঠে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাবের তদন্তে উঠে আসে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল। তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ওসি প্রদীপ ও তার সহকর্মীরা ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের অপরাধে জড়িত ছিলেন। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হলে শুরু হয় বিচারিক কার্যক্রম।
২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রদীপ কুমার দাশ এবং তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে, সুপ্রিম কোর্ট আজ সেই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন।
এই রায়ের পর সিনহার পরিবার ও মানবাধিকার কর্মীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সিনহার মা এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আজ আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে। আমরা অনেক অপেক্ষার পর ন্যায়বিচার পেলাম।”
আদালতের আদেশ অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা চাইলে রিভিউ আবেদন করতে পারেন, তবে তা খারিজ হলে বা না করা হলে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যেই ফাঁসি কার্যকর করা হবে। এই মামলার রায়কে দেশের বিচার বিভাগের জন্য একটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।